পরিচয়
কুরআন মাজিদের সর্বশেষ সূরা হলো সূরা আন-নাস। এই সুরাটি কুরআন মাজিদের ১১৪ তম সূরা। সুরাটি সপ্তম হিজরিতে মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূরা আন-নাস এর আয়াত সংখ্যা ৬টি। সুরাটির নামকরণ করা হয়েছে সূরায় ব্যবহৃত grill (আন-নাস) শব্দ দ্বারা। অভিশপ্ত ও বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্ট থেকে কীভাবে বাঁচা যাবে তা-ই এ সূরার আলোচ্য বিষয়।
ব্যাখ্যা
কুরআন মাজিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা হচ্ছে আল-ফাতিহা। এ সূরায় সমগ্র কুরআনের সারমর্ম সংক্ষিপ্তভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত কুরআনে ইমান ও নেক আমলের আলোচনা করা হয়েছে। আর এ সূরায় উষ্ণ মূলনীতি দুটি সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সূরাটি মূলত আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যম। এর প্রথম তিনটি আয়াতে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর শেষ তিন আয়াতে মানুষের পক্ষ হতে আল্লাহর নিকট মুনাজাত, প্রার্থনা ও মনের পরম আকুতি-মিনতি জানানো হয়েছে। আর মধ্যের একটি আয়াতে একত্রিতভাবে আল্লাহর প্রশংসা ও দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন- 'সুরাতুল ফাতিহা আমার এবং আমার বান্দাদের মধ্যে দু'ভাগে বিভক্ত। অর্ধেক আমার জন্য আর অর্ধেক আমার বান্দাদের জন্য। আমার বান্দাগণ যা চায় তা তাদেরকে দেওয়া হবে।' (মুসলিম)
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রিযিকদাতা। তিনি সারা জাহানের মালিক। জগতের সব কিছু তাঁর অনুগ্রহ ও করুণার মুখাপেক্ষী। তাঁর অসংখ্য নেয়ামত আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করি। তাই সর্বদা তাঁর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য। তিনিই সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য। তিনি দুনিয়ার সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালনকারী। তিনি শুধু ইহকালের মালিক নন পরকালেরও মালিক। পরকালের হিসাব-নিকাশ, জান্নাত ও জাহান্নাম সবকিছুই তাঁর অধীন। শেষ বিচারের কালে তিনিই একমাত্র বিচারক। জ্বিন-ইনসানের কৃতকর্মের পুষ্পানুপুঞ্জ হিসাব নিবেন তিনিই। অতঃপর পুণ্যবানদের তিনি পুরস্কার স্বরুপ দিবেন জান্নাতের অনাবিল সুখ শান্তি আর পাপীদের দিবেন জাহান্নামের মর্মন্তদ শাস্তি। এদিনের নিরঙ্কুশ মালিকানা কেবল তাঁরই। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ তাঁর নিকট সুপারিশও করতে পারবে না। তিনি ইচ্ছা করলে কোন বান্দাকে বিনা হিসেবেও জান্নাত দিতে পারেন। তাই সকল প্রশংসা ও ইবাদাতের শুধু তাঁরই প্রাপ্য। এতে তাঁর সমকক্ষ কেউ নাই।
মানুষকে কুমন্ত্রণাদাতা শয়তান দুই ধরনের। এক প্রকার শয়তানকে দেখা যায় না। তারা অদৃশ্য হয়ে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। তারা জিন শয়তান। আর অন্য প্রকার রয়েছে মানুষের মাঝে। মানুষ শয়তানও মানুষকে খারাপ কাজ করতে উৎসাহ যোগায় ও ধোঁকা দেয়। উভয় ধরনের শয়তান মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আল্লাহর আনুগত্য থেকে ফিরিয়ে রাখে। আল্লাহর ইবাদাত থেকে ফিরিয়ে রাখে। ভালো কাজ করতে বাধা প্রদান করে। আল্লাহ তা'আলার সাহায্য ছাড়া শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচা যায় না। তাই সূরা আন-নাস এ এই দুই প্রকার শয়তান থেকেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
সূরার আন-নাস-এর নৈতিক শিক্ষা
পৃথিবীতে আমরা এসেছি আল্লাহর আনুগত্য এবং ইবাদাত করার জন্য। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা। তিনি আমাদের মালিক। তিনিই ইবাদাত পাওয়ার একমাত্র যোগ্য। কিন্তু শয়তান আমাদেরকে তাঁর আনুগত্য থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য কুমন্ত্রণা দেয়। আমাদেরকে খারাপ পথে নিয়ে যেতে চায়। আমরা যদি আল্লাহর স্মরণ করি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি তাহলে শয়তান আমাদেরকে ধোঁকা দিতে পারবে না। আমাদের কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না।
আরও দেখুন...